আমাদের বাবা’রা মুক্তিযুদ্ধ করে নি। মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের বয়স ছিল দশ কি এগারো। ওই বয়সী ছেলেরা যে একেবারেই মুক্তিযুদ্ধ করে নি তাও নয়, করেছে। তবে তা সংখ্যায় অনেক কম। আমাদের বাবা’রা মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারেন নি। তারা তাদের পিতাদের সাথে ব্যস্ত ছিল গ্রাম রক্ষায়। তারা ব্যস্ত ছিল তাদের মাতা ও ভগ্নিদের সম্ভ্রম রক্ষায়। গ্রামের কিছু যুবক গিয়েছিল সুদূরে’র মুক্তিযুদ্ধে। বাবা’রা তাদেরকে বলেছিল, ‘তোরা যা, আমরা দেখবো। তোদের ঘরবাড়ি ও মা-বোনদের কোনো ক্ষতি হবে না।’ মুক্তিযুদ্ধের কমান্ড কি, কেনো এবং কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তার সাথে বাবা’দের কোনো যোগসূত্র ছিল না। তারা শুধু জানতো, পাঞ্জাবি’রা এসেছে, তাদেরকে ফিরাতে হবে। তাদেরকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। গ্রাম্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই তারা যুদ্ধের বছরটি রাজ্যের ভয় আর দুরন্ত সাহস বুকে নিয়ে পার করেছিল। অজপাড়া গাঁয়ে বাবা’দের হাতে বন্দুক উঠে নি। তাই তারা হয়ে উঠতে পারেন নি মূলধারার ‘মুক্তিযোদ্ধা’। তারা আদৌ কল্পনা করে নি, কোনো একসময় ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটিই ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যত জমিনে। আমাদের বাবা’রা রাজাকারও ছিল না। যদিও তা হবার যথেষ্ট সুযোগ ছিল।
আমাদের বাবা’রা সম্ভবত ভুলক্রমে বাঙালি হয়ে জন্মেছিল। পাহাড়ি হয়ে জন্মালে ভালো হতো। এ কথা মনে হওয়ার কারণ হলো, এখন দেখছি, রাষ্ট্র তাদেরকে নানাভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে রেখেছে। যার উত্তরাধিকার সূত্রে তাদের সন্তান হিসেবে আমরাও দ্বিতীয় তৃতীয় এমনকি চতুর্থ (!) শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছি। আমাদের বাবা’রা ‘মুক্তিযোদ্ধা’ নয় বলে আজ রাষ্ট্র আমাদেরকে আমলেই নিচ্ছে না। রাষ্ট্র কেনো মনে করছে, মুক্তিযোদ্ধা শব্দটির সাথে আমাদের বিরোধ রয়েছে? কিংবা, রাষ্ট্র কেনো মুক্তিযুদ্ধকে গণমানুষের মুখোমুখি দাড় করাতে চাচ্ছে? আজকে সরকারি চাকরিতে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং (প্রতিবন্ধী, আদিবাসী জনগোষ্টি সহ) অন্যান্য কোটা ২৫%। আর মাত্র বাকি ৪৫% পদ পূরণ করতে পারবে অন্যান্য’রা। অথচ, রাষ্ট্র তার সংবিধানের ২৯ নং ধারা’য় ঘোষণা করেছে-
“(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।
(২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।”
অর্থাৎ, রাষ্ট্র নিজেই তার কথার বরখেলাপ করে চলছে।
আমাদের বাবা’রা সম্ভবত ভুলক্রমে বাঙালি হয়ে জন্মেছিল। পাহাড়ি হয়ে জন্মালে ভালো হতো। এ কথা মনে হওয়ার কারণ হলো, এখন দেখছি, রাষ্ট্র তাদেরকে নানাভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে রেখেছে। যার উত্তরাধিকার সূত্রে তাদের সন্তান হিসেবে আমরাও দ্বিতীয় তৃতীয় এমনকি চতুর্থ (!) শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছি। আমাদের বাবা’রা ‘মুক্তিযোদ্ধা’ নয় বলে আজ রাষ্ট্র আমাদেরকে আমলেই নিচ্ছে না। রাষ্ট্র কেনো মনে করছে, মুক্তিযোদ্ধা শব্দটির সাথে আমাদের বিরোধ রয়েছে? কিংবা, রাষ্ট্র কেনো মুক্তিযুদ্ধকে গণমানুষের মুখোমুখি দাড় করাতে চাচ্ছে? আজকে সরকারি চাকরিতে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং (প্রতিবন্ধী, আদিবাসী জনগোষ্টি সহ) অন্যান্য কোটা ২৫%। আর মাত্র বাকি ৪৫% পদ পূরণ করতে পারবে অন্যান্য’রা। অথচ, রাষ্ট্র তার সংবিধানের ২৯ নং ধারা’য় ঘোষণা করেছে-
“(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।
(২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।”
অর্থাৎ, রাষ্ট্র নিজেই তার কথার বরখেলাপ করে চলছে।
আমাদের পূর্বপুরুষেরা যুদ্ধ করেছিল, সময়ের প্রয়োজনে। জাতির সেই সূর্যসন্তানেরা কখনো এই আশায় যুদ্ধ করে নি যে, তাঁদের সন্তান কিংবা দৌহিত্রগণ তাদের পূর্বপুরুষদের যুদ্ধে যাওয়াকে সম্বল করে রাষ্ট্রে বিশেষ অবস্থান তৈরি করবে। তাঁরা যদি জানতো, তাঁদের নয়মাসের পরিশ্রমকে পুঁজি করে রাষ্ট্রে বৈষম্য তৈরি হবে, তাহলে আদৌ তাঁরা যুদ্ধ করতেন না। রাষ্ট্রের কর্তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, চাকরিতে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করা হলো, নাকি সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের বিপরীতে মুখোমুখি দাড় করানো হলো? ড. আকবর আলী খানের নেতৃত্বে কয়েক বছর আগে একটি গবেষণা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ২৫৭ প্রকারের কোটা আছে। যা সমগ্র বিশ্বে এক বিরল ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধারা অবশ্যই বেশি সুযোগ ও সম্মান পাবেন। এ নিয়ে যারা দ্বিমত ও বিরোধীতা করবেন, তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। তাই বলে, বংশ পরম্পরায় সন্তান ও দৌহিত্রদেরকেও আমরা সমানভাবে সম্মান, সুযোগ ও অগ্রাধিকার দিতে পারি না।
.
অগণিত সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী’র অধিকার হরণ করাটাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাও মেনে নিতে পারেন না। অথচ রাষ্ট্র অতিরিক্ত অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের মুখোমুখি এনে দাড় করিয়েছে। বাস্তবে, ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও অন্যান্য ২৫% কোটাসহ মোট ৫৫% কোটা সংখ্যাগরিষ্ট সাধারণ শ্রেণীর অধিকারের অন্তরায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমিয়ে ১০ কিংবা ১৫ পারসেন্টে নামিয়ে এনে এই বিব্রতকর পরিস্থিতির সমাধান করা যেতে পারে। এতে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরাও অনেক সুযোগ পাবে। রাষ্ট্র কি এই বিষয়টি একটু ভেবে দেখবে?
.
অগণিত সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী’র অধিকার হরণ করাটাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাও মেনে নিতে পারেন না। অথচ রাষ্ট্র অতিরিক্ত অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের মুখোমুখি এনে দাড় করিয়েছে। বাস্তবে, ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও অন্যান্য ২৫% কোটাসহ মোট ৫৫% কোটা সংখ্যাগরিষ্ট সাধারণ শ্রেণীর অধিকারের অন্তরায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমিয়ে ১০ কিংবা ১৫ পারসেন্টে নামিয়ে এনে এই বিব্রতকর পরিস্থিতির সমাধান করা যেতে পারে। এতে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরাও অনেক সুযোগ পাবে। রাষ্ট্র কি এই বিষয়টি একটু ভেবে দেখবে?