ভাল কিছু করতে হলে পড়াশোনা শুরু করুণ আজ থেকে।

আমার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষক। আমার প্রথম জীবনের পড়াশোনা আমার মায়ের বিদ্যালয়েই এবং সেখান থেকেই আমার প্রথম অর্জন পিএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি। এই পর্যন্ত পড়াশোনা ঠিক ই ছিলো, আসলে ঠিক রেখেছিলো আমার বাবা-মা। তারপর ই আস্তে আস্তে পড়াশোনার খারাপ অবস্থা শুরু। জেএসসি পরীক্ষায় করলাম খারাপ রেজাল্ট, তারপর আসলো এসএসসি। এইটায় শেষের দিকে একটু পড়াশোনা করছিলাম এবং ফলাফল ৪.২২ আর্স থেকে। তারপর ভর্তি হলাম এলাকার কলেজ এই, কিসের ক্লাস কিসের পড়া? ঘোরাফেরা, মোবাইল টিপাটিপি নিয়েই পড়ে রইলাম। আব্বা বেশ অনেকবার মোবাইল নিয়া নিছে, আবার কিনেছি। এভাবে একেবারে শেষের দিকে এসে একটু পড়াশোনা করলাম, পরীক্ষা গুলো ভালই দিলাম। এইদিকে পরীক্ষার শেষের দিকে আসতেই আব্বা ঢাকা চাচাতো ভাই ও বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে কোচিং এর জন্য। মাথায় দেখি তখন আরেকচাপ শুরু হলো, হ্যা আমার ও ইচ্ছা ছিলো ঢাকা ভার্সিটি তে পড়ার। কিন্তু ছিলোনা কোন প্রবল ইচ্ছা , কারন এত এত শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিবে সারা দেশ থেকে, নিবে মাত্র অল্প কয়েকজন। আমি আগেই ভয় পেয়ে হাল ছেড়ে দিছিলাম। কিন্তু আব্বার ইচ্ছায় আসতে হলো ঢাকা, শুরু হলো ফার্মগেট যাওয়া আসা, প্রায় সময় এই লেগুনায় ঝুলতে ঝুলতে যাওয়া। এভাবে ঘুরাফেরা তেমন না করলেও তেমন কিছু না পড়েই চলতে থাকলো সময়, রেজাল্ট পেয়ে ত গেলাম আরো ভেংগে, মাত্র ৩.৬৭ জিপিএ। এমনিতেই তো সম্ভব মনে হচ্ছিলো না আমার দ্বারা, তার উপর এই রেজাল্ট, ঢাকা ভার্সিটি তে রেজাল্ট এর ৮০ মার্কস এর মাঝে ১৮ মার্কস নেই। এভাবে ইদুল ফিতর শেষে আবার ঢাকা আসলাম। তখন কি করে যেনো মাথায় একটা চিন্তা ঢুকলো যে আমাকে চেষ্টা টা করতে হবে, কারন আব্বা যখন ফোন দিয়ে কিছু কথা বলতো একটা আশার কথা ইচ্ছার কথা বলতো বুঝাতো তখন নিজেকে অনেক দোষী মনে হতো।চিন্তা করে দেখলাম আব্বা -আম্মার ইচ্ছার কথা,আমাকে যে এতগুলো টাকা দিচ্ছে সেগুলো কিভাবে দিচ্ছে এসব নানান কিছু। তারপর এভাবেই আস্তে আস্তে পড়া শুরু করলাম, মোবাইল টিপা কমালাম। কিন্তু অনেক বেশি যে পড়তাম তা না, তবে প্রতিদিন ই পড়তে লাগলাম। হঠাৎ ঢাকা ভার্সিটির এক্সাম, জগন্নাথ এ দেওয়ার যোগ্যতা হয় নি। পরীক্ষার হলেও জানি কেন মনে হচ্ছিলো না আমি এক্সাম দিয়ে দিচ্ছি ঢাকা ভার্সিটির। তারপরও মোটামুটি ভালই দিলাম এক্সাম। রেজাল্ট আসলো অয়েটিং এ। অয়েটিং এ থেকে ততটা খারাপ লাগে নি যতক্ষন এটা দেখি নি যে আমার ই এক ফ্রেন্ড এর ফ্রেন্ড এক্সাম এ আমার চেয়ে প্রায় ৯ নাম্বার কম পেয়েও আমার চেয়ে সিরিয়াল ১০০০(প্রায়) আগে। তখন নিজের প্রতি রাগ হচ্ছিলো আগের সময় টার কথা চিন্তা করে, এইচ এস সি রেজাল্ট এর কথা ভেবে। তারপর ঢাকা তে হল না, শেষে সংগীত নাট্যকলা, থিয়েটার এন্ড পার্ফরমেন্স এসব এর জন্য ডাকলো,এসব এ পড়ার ইচ্ছা নেই তাই আব্বাকেও বলি নি, পরে আব্বা জানতে পেরে অনেক রাগ বকাঝকা করলো।
রাজশাহী পরীক্ষা মিস করলাম জ্যাম এ আটকে থেকে বাসে, পুরা ২৪ ঘন্টা বাসে । ৮:৩০ এ এক্সাম ছিলো মিস, ২:৩০ টায় এ ইউনিট এর পরীক্ষা দিলাম, এইটায় ও অয়েটিং, পরে সংগীত ও নৃত্যকলার জন্য ডাকছিলো যাই নি। অবশেষ এ চিটাগাং এক্সাম দিলাম আবার ও অয়েটিং বি. এবং ডি দুই ইউনিট এই।
অবশেষে ডি ইউনিট এ ডাক পড়লো অয়েটিং থেকে, ডাক পড়ার দুইদিন পর দেখলাম সাব্জেক্ট আসছে নৃ-বিজ্ঞান। তারপর ও ভর্তি নিয়ে কনফিউশন এ থেকে লাস্ট ডেট এর দিন ভর্তি হলাম। পরে মাইগ্রেশন এ সমাজতত্ত্ব আসছে। এইগুলা ছাড়া কুমিল্লার ফর্ম তুলা হয়েছিলো এক্সাম দেওয়া হয় নি।
আসলে আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া আমার এই অবস্থান এর জন্য এবং জুনিয়রদের প্রতি আমার অনুরোধ আমার মতো ভুল করো না তোমরা, শুরু থেকেই পড়াশোনা করো ভাল করে। আর রেজাল্ট এর জন্য আমাকে অনেক ভুগতে হলেও আমার কিন্তু ঠিকানা একটা হয়েছে, সো প্রিপারেশন নেও ভাল করে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন