একদিন না একদিন সবার চাকরি হবে কিন্তু মনে থাকবে বেকারত্বের দিনগুলো।
দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেলো ৩৫ তম সিভিল
সার্ভিসে জয়েন করলাম। মনে হচ্ছে এইতো সেদিন
কাঁপাকাঁপা হাতে সাইন করলাম। বেকারত্বের অবসান হলো। অামি বলার মতো একটা পরিচয় পেলাম। বসার মতো একটা চেয়ার পেলাম। পেলাম চিন্তাহীন রাত কাটানোর অধিকার !
খুব মনে পড়ে বেকারত্বের দিনগুলোর কথা। প্রতি
শুক্রবার যে স্রোত চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যায়
অামিও ছিলাম তার অংশ!
যেদিন দিনগুলোতে অামার পরীক্ষা থাকতো সেই দিনগুলোতে মা রোজা রাখতেন। পরীক্ষা শেষে মাকে যখন ফোন দিতাম তিনি জিজ্ঞেস করতেন..... "
পরীক্ষা কেমন হইছে বাবা ?
চাকরি হবে....?
পরীক্ষা অামি ভালোই দিতাম অথচ চাকরি হতো না। চাকরিতো তাদের হয় যাদের কোটা অাছে। যাদের লবিং অাছে। যাদের ঘুষ দেওয়ার সামর্থ্য অাছে। যাদের প্রশ্ন কেনার ক্ষমতা অাছে !
অনার্স লাইফে অনেক অানন্দ নিয়ে টিউশন করলেও একটা পর্যায়ে এসে খুব অপমান লাগতো। অপমান লাগতো তখন যখন পাঁচ তালা বেয়ে উঠে দেখতাম স্টুডেন্টের বাসায় তালা ঝুলছে.. !
অপমান লাগতো তখন যখন বেতন দেওয়ার
সময় শুনিয়ে দিতেন.... " স্যার এই মাসে অাপনি তিন দিন অাসেন নাই। এরকম করলেতো বাচ্চা পিছিয়ে
যাবে। অাপনাকেতো পুরা মাসের বেতন দেওয়া হয়, তাই না??!
" ঈদের সময় চাকরিজীবী যখন বেতনের ডাবল
বোনাস নিয়ে ঘরে ফিরতো তখন ২৮ রমজানে টিউশনের বেতন সাথে ২০০-৩০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বলতো.. "
সুন্দর থেকে একটা পাঞ্জাবী কিনে নিয়েন....!!
"বাসায় ফিরে ব্যাগ গোছানোর সময় নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে অাসতো। অাচ্ছা ২০০-৩০০ টাকার ভালো পাঞ্জাবী কোথায় পাওয়া যায়....???
ঈদে বাড়ি গেলে প্রতিবেশীরা শুভাকাঙ্ক্ষীর ছদ্মবেশে
কলিজায় অাঘাত দিতো। অমুকের ছেলে এই করছে
তমুকের ছেলে সেই করছে.....!
অাত্মীয়রা অাকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিতেন। বাবার কাঁধে অামি মস্ত বড় বোঝা..!
অামি নিজেকে লুকিয়ে রাখতাম। বাথরুমে ঢুকে কল ছেড়ে কান্নার শব্দ লুকাতাম..... !
গতকাল সিভিল সার্ভিসে অামার এক মাস পূর্ণ হলো।
অফিসের হেড ক্লার্ক ফোন দিয়ে জানালো বেতন এবং
বোনাস বিল পাশ হয়েছে। টাকার পরিমাণ নেহাত মন্দ
নয় ! শুনছি এই ঈদে অামায় গ্রামে সংবর্ধনা দেওয়া
হবে। অথচ গত ঈদে এরাই অামায় উপহাস করেছে !
সাফল্যে তালি অার ব্যর্থতায় গালি দেওয়ার সংস্কৃতি
পাল্টাতে হবে।
Tags:
মোটিভেশন