সফলতার আরেক নাম ধৈর্য, কাজ করে যাও সফলতা একদিন আসবে।

তুমি যা করতে চাও,  তার পেছনে সময় দাও, দেখবে সসফলতা আসবে।  পৃথিবীতে কোন কাজেই ছোট নয়,  তোমার কাছে যে কাজ ছোট মনে হয়,  একটু খেয়াল করে দেখো, সে কাজ অন্য কেউ করছে।  তাহলে তুমি কি করে এই কাজকে ছোট করে দেখবে।   সেসময় জীবন আমায় কিছু ব্যাপার শিখিয়েছিল। কোনও কিছু করার জন্য যতটা দরকার অনুপ্রেরণার, তার চাইতে অনেক অনেক অনেক বেশি দরকার, ধৈর্য ধরে কাজটির পেছনে লেগেথাকা। প্রতিদিনই রুটিন করে কাজ করে যেতে হবে। কাজটি করতে ভাল লাগুক, আর না-ই লাগুক, কাজটি করে যেতে হবে, কাজটির পেছনেই সময় দিতে হবে। মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজেকে কাজটার পেছনে নিয়োজিত করে রাখতে হবে। পড়াশোনা করাটা প্রয়োজন হলে আনন্দে হোক আর বিনা আনন্দেই হোক, পড়াশোনা করে যেতেই হবে। অংক করতে ভাল লাগে না বলে যদি আমি কখনওই খাতাকলম নিয়ে না বসি, তবে আমি জীবনেও অংক শিখতে পারব না। এটাই বাস্তবতা। যদি আমি অনুপ্রেরণার জন্য অপেক্ষা করে থাকি, তাহলে হয়ত আমি কখনওই আমার কাজটা করতে পারব না। অনুপ্রেরণার জন্য অপেক্ষা করে থাকে যারা, ওরা কেবলই অজুহাত দেখানোর রাস্তা বানায়। আর কে না বোঝে, লোকে কেবল অর্জনকেই স্যালুট করে আর অজুহাতকে স্রেফ করুণা করে! কোনও লেখক যদি অপেক্ষা করে বসে থাকেন, কখন উনি অনুপ্রাণিত হবেন আর লিখবেন, তাহলে হয়ত উনি সারাজীবনে একটি বইও লিখতে পারবেন না। কাজ করে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া, তা বেশিরভাগ সময়ই খুবই একঘেয়ে আর ক্লান্তিকর একটা ব্যাপার। তবু কাজ করে যেতেই হবে---ভাল লাগুক, আর না-ই লাগুক। কাজ করতে-করতেই অনুপ্রেরণা চলে আসে। অনুপ্রেরণা থেকে কাজ নয়, কাজ থেকে অনুপ্রেরণা এ সহজ সূত্রটি একবার মাথায় গেঁথে গেলে আর পিছিয়ে পড়ে থাকার কথা নয়। আমার মনে আছে, আমি সেসময় ফেসবুক/ ভাইবার/ হোয়াটস্‌অ্যাপ/ ইমো কোথাও ভুলেও ঢুকতাম না, কোনও ফোন ধরতাম না। সবকিছুতেই আর সবাইকেই সময় দিলে সব স্বপ্ন আজীবন স্বপ্নই থেকে যাবে।এটা নিশ্চিত। আমি সবসময়ই মিলিয়ে নিতাম, আমি যা করছি, তার কি সত্যিই কোনও দরকার আছে। অন্তত এই সময়টাতে? যদি উত্তর পেতাম না, তবে সেটি করা তৎক্ষণাৎই বন্ধ করে দিতাম। জীবনে কোন কারণে কিছু করতে পারলাম না, সেটা কোনও বিষয় না, করতে যে পারলাম না, সেটাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। এ পৃথিবী কখনওই অজুহাত শুনতে প্রস্তুত নয়।
নিজের উপর রাগ করে আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটাই ডিলিট করে দিয়েছিলাম। আমি ফেসবুকে ছোটছোট গল্প লিখতাম, ওই মুহূর্তে আমার ফলোয়ার ছিল ৩৭,৮৪১ জন। আমি ফেসবুকে কতটা অ্যাক্টিভ ছিলাম, এ থেকে তা সহজেই অনুমেয়। ডিলিট করার সময় বারবারই মনে হচ্ছিল, আহা, জীবনের সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে! এতএত ফ্যান-ফলোয়ার, পোস্ট, সব চলে গেল! এখন বুঝি, ওটাই ছিল আমার জীবনের শুরু! ওইসব ফেসবুক ফ্রেন্ড, ফলোয়ার খুবই অপ্রয়োজনীয় আর অতিমূল্যায়িত জিনিস। আগের অ্যাকাউন্ট তো আর নেই, নতুন অ্যাকাউন্টে এখন আমাকে লক্ষাধিক লোক ফলো করে। লোকে আসলে ব্যক্তিকে ফলো করে না, অর্জনকে ফলো করে। তখন প্রায় আটত্রিশ হাজার ফলোয়ারকে আমার গোটা জীবনের সমান মনে হত, আর এখন লক্ষাধিক ফলোয়ারকেও আমার একটা অলস দুপুরের নির্বিঘ্ন ঘুমের সমানও মনে হয় না। সেসময় আমি নিজেকে পুরোপুরিই নিঃসঙ্গ করে ফেলেছিলাম। নিজেকে নিঃসঙ্গ করে না ফেললে কোনওভাবেই অন্যদের চাইতে বেশি কাজ করা সম্ভব নয়। আমাকে হয়ত অনেকেই রোবট ডেকেছে। কিন্তু আজ আমি বুঝি, আমি ঢাকা ভার্সিটিতে দ্বিতীয়বারেও চান্স না পেলে লোকে আমাকে তার চাইতেও আরও বেশি আজেবাজে কথা বলতে ছাড়ত না। আমি দেখেছি, কোনও কাজের সবচাইতে কঠিন ধাপটা হচ্ছে, শুরু করাটা। শুরু করে দিলে আর নিজেকে ফাঁকি না দিয়ে প্রতিদিনই করে গেলে, কাজটা শেষ হবেই হবে।
আমি সেসময় এক ধরনের দ্বৈত সত্তা নিয়ে বাঁচতাম। আমি অন্য যে কাজই করি না কেন, তার পুরোটাই আমার কাছে সময়ের অপচয় মনে হত। আমার মাথায় সারাক্ষণই ঘুরতে থাকত, কখন আমি পড়তে বসব! পড়তে যে খুব শখ করে বসতাম, তা কিন্তু নয়, আমি বুঝে গিয়েছিলাম, বাঁচতে চাইলে আমাকে পড়তে বসতেই হবে! কারণ, আমি জানতাম, আমি আমার স্বপ্ন ছুঁতে না পারলে আমার অন্য সব কাজই অর্থহীন হয়ে যাবে। হাজার বছর লুকিয়ে বাঁচার চাইতে হাজার মিনিট চুটিয়ে বাঁচা অনেক বেশি আনন্দের। তখন পড়তে ইচ্ছে না করলেও টেবিল ছেড়ে উঠে যেতাম না।অন্য যা পড়তে ভাল লাগে, তা-ই পড়তাম। গান শুনতে ইচ্ছে করলে একটু গান শুনে নিতাম। তবে তা ততক্ষণ পর্যন্তই, যতক্ষণ না আমার সাময়িক অনিচ্ছাটা কাটছে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, আধাঘণ্টা ইন্সট্রুমেন্টাল শুনলে ক্লান্তি কেটে যাওয়ারই তো কথা! টেবিল ছেড়ে একবার উঠে গেলে নিজেকে আবারও টেবিলে টেনে আনাটা খুব কঠিন কাজ। যতক্ষণ জেগে আছি আর বাথরুমে না যাচ্ছি, ততক্ষণই টেবিলে থাকব---এই টার্গেটেই প্রতিদিন বাঁচতাম। প্রতিদিনই পড়ার টেবিল ছাড়তাম এক ধরনের অতৃপ্তি আর আত্মঅভিযোগ নিয়ে, যাতে করে পরেরদিন আরও বেশি করে নিজেকে খাটিয়ে নিতে পারি। প্রতিভা হয়ত সকলের থাকে না, কিন্তু পরিশ্রম করার ক্ষমতা তো সবারই থাকে! আমি বিশ্বাস করি, যে কেউই ক্রমাগত পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিভার ঘাটতিকে অতিক্রম করতে পারে। কাজ করে যাওয়াটাই জরুরি, বেঁচে থাকাটা নেহায়েত অপ্রয়োজনীয়। আমি ওই সময় কঠোর পরিশ্রম করতে পারতাম, এবং এর ফলে আমার ভেতর থেকে যতটা বের করে আনা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করতাম, তার চাইতে অনেক বেশি বের করে আনতে পেরেছি। সময়ের প্রয়োজনে হঠাৎ করেই আমার বিবেকবোধ খুবই তীব্র হয়ে উঠেছিল। ওই সময় আমি এতটাই বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিলাম যে, আমি জানতাম, কেউ যদি আমাকে এটা সম্পর্কে নিশ্চিত করেও দিত। যতই পড়ি না কেন, আমি কোথাও চান্স পাব না। তবু আমি নিরলসভাবে চেষ্টা করে যেতাম। আমি নিজেকে বারবার বলতে থাকতাম---আমি যা করছি, তার শেষ দেখে তবেই ছাড়ব!
إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم